“প্রাণই হইল জ্ঞানের উন্মেষ ক্ষেত্র, প্রাণ ভিন্ন মহাপ্রাণের উপলব্ধি হইতে পারে না। প্রেমমাখা প্রাণের ঐকান্তিকতার X-ray হইল তাহাকে বুঝিয়া নিবার মূল উপাদান। তুমিতে আমার অস্তিত্ব বিলীন করার যে ন্যোস্তি তাহাই হইতেছে তাঁর রসতত্তে পৌছার আসল উপায়।” জালাল উদ্দীন খাঁ।
জালাল উদ্দীন খাঁ ছিলেন নেত্রকোণা অঞ্চলের একজন বিখ্যাত বাউল সাধক। তিনি অসখ্য গান রচনা করে গিয়েছেন। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার ও সাধক। তাঁর গানগুলোওতে বাংলার মৌলিক লোকজ দর্শন ও দেহতত্তের পরিচয় পাওয়া যায়। “বিশ্ব রহস্য” নামে তাঁর একটি দার্শনিক গ্রন্থ রয়েছে। এই গ্রন্থে তিনি আদি বাংলার মোলিক চিন্তা থেকে শুরু করে আর্য কর্তৃক প্রবর্তিত দর্শন এবং পরবর্তীতে মুসলিম দর্শনের সুফি মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি সুফি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হলেও বাঙালির মৌলিক লোকজ দর্শনের স্বকীয়তা রেখেই তাঁর গান ও মতবাদ প্রচার করেছেনে। এখনো নেত্রকোণা অঞ্চল সহ বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্ত রয়েছে।
বাংলার মৌলিক লোকজ দর্শন ও বাউল মতবাদ দেহতাত্ত্বিক হলেও এর মধ্যে মানবতাবাদী মতাদর্শের বীজ নিহিত রয়েছে। এই দর্শনে মানব প্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঙালির মৌলিক লোকজ দর্শন ও বাউল দর্শনের মূল কথা হলো যথাযথ প্রেম সাধনে নিজেকে উপলব্ধি করা যায় এবং মহাপ্রাণকেও উপলব্ধি করা যায়।
বস্তুত প্রেমের কল্যাণেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে ক্রমশ অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠতম স্থান। প্রেমের আলোকেই আলোকিত করেছে পৃথিবী। প্রেমের মাঝেই নিহত রয়েছে মানুষের কল্যাণ। বাঙালির লোকজ দর্শনের এই সুর এখন অবলুপ্ত প্রায়। তাই এসব দর্শন সংগ্রহ ও লালন এখন সময়ের দাবী।
লেখক: মো. মজিবুর রহমান. কর্মকর্তা, শিক্ষা-মন্ত্রণালয়।
Leave a Reply