চলে গেলেন আমাদের গ্রামের অহংকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিম উদ্দিন ভাই
চলে গেলেন আমাদের গ্রামের অহংকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি হাসিম উদ্দিন ভাই। মনে আছে তিনি যখন বিজয়ের পর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন, গ্রামের সবাই তাকে দেখার জন্য ভীড় করে। আমার বয়স তখন ছয় বছর। আমরা কয়েকজন সমবয়সী তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ, একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি অসীম সাহসের সাথে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তাও আবার একটি চেয়ারে বসে আছেন হাতে স্টেনগান নিয়ে। তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম আবার তাকে দেখার জন্যও ভীড়ের মাঝে উঁকিঝুঁকি মারছিলাম। তিনিই আমাদের ভয় ভাঙ্গিয়ে দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। কিভাবে স্টেনগান চালাতে হয়, কিভাবে গুলি করতে হয় তা দেখালেন।
এরপর কত কথা কত স্মৃতি তার সাথে জড়িত। একসাথে নাটক, যাত্রা, গ্রামের উন্নয়ন সব কিছুতেই তিনি ছিলেন আমাদের প্রেরণা। মনে প্রাণে তিনি ছিলেন একজন প্রগতিশীল ভালো মানুষ। একসাথে বসলেই তার কাছ থেকে মুক্তি যুদ্ধে তার অভিজ্ঞতার বিভিন্ন গল্প শুনতাম এবং মনে মনে শিহরিত ও অহংকার বোধ করতাম এই জন্য যে তিনি আমাদের গ্রামেরই বড় ভাই, আমার ভগ্নিপতি। ইচ্ছে ছিলো তার মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি লেখা লিখবো, এ বিষয়ে তার সাথে কথাও হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
আজ সকালে ফেইসবুকে তার মৃত্যু সংবাদ দেখে মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছে। এই লক ডাউনের আগেও গ্রামে গিয়ে তার সাথে অনেক্ষণ আড্ডা দিয়েছি। তার এ অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এমন একটা সময়ে হলো যে গ্রামে গিয়ে তাকে শেষবারের মত দেখার ইচ্ছেটাকেও সংবরণ করতে হলো। ওপারে ভালো থাকবেন হাসিম ভাই, এই দোয়া করি, আমীন।
লেখক: মো. মুজিবুর রহমান, কর্মকর্তা, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা হাসিম উদ্দিনের প্রতিবেশী।
Leave a Reply